সাদ্দাম হোসাইন
প্রকাশ: সোমবার ০৯ জানুয়ারী, ২০২৩ - ০৮:৩১ এএম
সাদ্দাম হোসাইন
প্রকাশ: সোমবার ০৯ জানুয়ারী, ২০২৩ - ০৮:৩১ এএম
তাঁর কি পিস্তলটা এভাবেই ধরার কথা?... জ্যাক রায়ানে জন ক্রাসিন্সকি; ছবি: জ্যান থিস/প্রাইম ভিডিও
আপনার আশেপাশে সবখানেই লুকিয়ে আছে স্পাই-বিশেষ করে টিভিতে। নেটফ্লিক্স এবং এপলটিভিপ্লাসের প্রচারণায় এখন গোয়েন্দা থ্রিলারগুলোর রমরমা অবস্থা। কিন্তু এগুলোর দর্শক যে শুধু সাধারণ মানুষ, তা কিন্তু নয়। যারা গোপনে লুকিয়ে থেকে কাজ করে জীবনধারণ করে থাকেন, এরকম মানুষেরাও দেখে থাকেন এই থ্রিলারগুলো। এবং, কখনো কখনো টিভির স্ক্রিনে এগুলো দেখে তারা মোটামুটি ভ্যাবাচ্যাকাই খেয়ে যান।
নতুন ধারার এই টিভি শো গুলোতে আইনজীবী, হেরে যাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে বাস্তবজীবনের স্পাই সবাই আছে। আপলের টিভি প্লাসের স্লো হর্সেস নামক শো-তে একজন অদক্ষ সিক্রেট এজেন্টের শেষমেশ এমআইফাইভের প্রশাসনিক শাস্তির মুখে পড়া দেখানো হয়েছে। আইটিভিএক্সের এ স্পাই এমং ফ্রেন্ডস শো-তে একজন ক্যাম্ব্রিজ শিক্ষিত কেতাদুরস্ত মিথ্যুক গোয়েন্দা অফিসারের গল্প দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে প্রাইম ভিডিওসের জ্যাক রায়ান হচ্ছেন একজন সিআইএ এজেন্ট।
এসব চরিত্রগুলোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞ গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞরা সবসময়ই দ্বিমত করে আসছেন। “আমি যথেষ্ট চাপের মধ্যে পড়ে গেছি” সাবেক সিআইএ বিশ্লেষক গেইল হেল্ট বিলাপ করলেন “সিআইএ অফিসাররা যা করে এবং যা দেখানো হয় তার মধ্যে কিছুটা সত্য অবশ্যই আছে।“ তবে বাস্তবজীবনের অফিসাররা ৯০-৯৫ ভাগ সময় অফিসে বসে কাগজ কলমেই কাজ করে যা কেউ দেখতে পছন্দ করবে না।
যদি এসব শোগুলো আমাদেরকে বাস্তবটা দেখতে দিত তাহলে, তিনি এবং অন্যান্য ভেতরের মানুষেরা জানান, দর্শকরা বুঝতে পারতো এগুলো কতটা সাধারণ এবং বিরক্তি উৎপাদক হতে পারে।
“এই শো-গুলোর সাথে আমার সম্পর্ক মূলত আইনপ্রয়োগকেন্দ্রিক। এগুলোকে আমার কখনো ভালো লাগে কখনো মন্দ লাগে,” জানালেন সাবেক এফবিআই এজেন্ট জেফ করটেজ। “যখন এগুলো সত্যিটা দেখায় তখন ভালো লাগে, যখন মন্দটা দেখায় তখন খারাপ লাগে। সত্য/মিথ্যা দ্বারা আমি বোঝাচ্ছি যে এটা বাস্তবিক নয় বরং কোন সত্য ঘটনা।“
“বাস্তবতা হচ্ছে এসব অফিসারদের ৯০-৯৫ ভাগ অফিসিয়াল কাগজ-কলমে কাজ করে। এসব জিনিস কেউ পছন্দ করবে না। আমি নিজেই যে ৫-১০ শতাংশ কাজগুলো উত্তেজনাকর সেগুলোই পছন্দ করি।“
এ স্পাই এমং ফ্রেন্ডসে আনা ম্যাক্সওয়েল ও কলিন মেস; ছবি: রব ইয়ংসন/সনি পিকচার্স টেলিভিশন
এই সমালোচনা সব ধরণের শো-য়ের ক্ষেত্রে খাটে না। বিশেষ করে নতুন করে মুক্তি পাওয়া বড় বাজেটের চোখ ধাঁধানো একশন সিনেমাগুলো যেমন, নেটফ্লিক্সের দ্যা রিক্রুট থেকে শুরু করে বাস্তবজীবনের নাটকীয়তা উদ্ভূত ঘটনাগুলো যেমন লিটভিনেকো এবং এ স্পাই এমং ফ্রেন্ডস যেগুলো অনেকক্ষেত্রে বাস্তবতার সাথে মিল রেখে করা হয়ে থাকে।
কিছু শো-য়ের ক্ষেত্রে বলা যায় যে এটা একদমই মিথ্যা গল্প তবে অন্য অনেকগুলোর ক্ষেত্রে ভুলটা কম। এরকমটাই ধারণা জন শিপারের। তিনি ২৮ বছর সিআইএ-র ন্যাশনাল ক্লান্ডেস্টাইনে কাজ করে ২০১৪ সালে অবসরে যান। অল্পকিছু শো-ই তাঁর কাছে বাস্তব মনে হয়। “কোন সিনেমা বা শো-কেই পুরোপুরি সত্য বলা যাবে না। তবে দি ব্যুরো শো-টি হেডকোয়ার্টার এবং মাঠের কর্মীদের মধ্যে দেওয়া-নেয়ার বিষয়টা দেখায়। অন্যদিকে দি আমেরিকান্স এবং দি স্পাই আন্ডার কভার গোয়েন্দা এবং রাস্তায় কাজ করা গোয়েন্দাদের বিষয়গুলো ভালো দেখিয়েছে,” তিনি বললেন।
করটিজের কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর লাগে যখন নায়ক ঠিকভাবে অস্ত্রটা ব্যবহার করতে পারেন না। যেটার ব্যাপারে অভিযোগ অনেকেই দিয়ে থাকেন। “রুম ক্লিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে চরিত্রগুলো প্রায়ই ট্রিগারে আঙ্গুল রাখার ক্ষেত্রে ভুল করে বসে, এমনকি অস্ত্রটাও ঠিকমত ধরতে পারে না,” তিনি জানালেন। “বাস্তব জীবনে আপনার আঙ্গুল থাকবে ব্যারেলের বরাবরে এবং বন্দুক না চেপে ধরে আপনি ট্রিগার টানতে পারবেন না । এটাই সম্ভবত আমরা যারা এই কাজ করে আসছি তাঁদের কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর জিনিস বলতে পারেন। আমরা সবসময়ই এটা লক্ষ্য করি।“
এই কাজ সম্পর্কে যারা ওয়াকিবহাল তাঁদের কাছে আরও একটি অভিযোগ প্রায়ই শুনতে পাওয়া যায়। সেটা হল অনেকবেশি যৌনতা, গোলাগুলি আর প্রায়ই এজেন্ট বা অফিসারের সক্ষমতাকে অতিরঞ্জিত করে দেখানো। তারা আরও জানান যে, টিভিতে কোন একটা কাজ করতে এক ঘন্টা বা হাফ ঘন্টায় যেমন দেখায় তারচেয়ে অনেক বেশী সময় লেগে যায় বাস্তবজীবনে।
এই কারণে অনেক অভিজ্ঞ মানুষেরা এসব শো একদমই এড়িয়ে চলেন। ট্রেসি ওয়াল্ডার এফবিআইএ-র একজন সাবেক এজেন্ট। তিনি সিআইএ-র কাউন্টার টেরোরিজম সেন্টারে গোপন অপারেশনের কাজেও অভিজ্ঞ- তিনি একটি ছদ্ম নাম নিয়ে ব্লাক সাইট গুলোতে যান সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্য নিয়ে। “হোমল্যান্ডের একটি এপিসোডে আমি এতটুকু দেখে আর এগোতে পারিনি,” তিনি জানালেন। “এখানে যেটা ভুল ধারণা দিতে পারে তা হচ্ছে আমাদের ক্ষমতাকে এখানে অস্বাভাবিক করে দেখানো হয়েছে। এগুলো আসলেই সত্য নয়। সবকিছুর জন্য সময়ের প্রয়োজন এমনকি কোন কোন কাজের জন্য বছরের পর বছরও লেগে যেতে পারে।“
প্রাইম ভিডিওর দ্যা ব্যুরোর একটি দৃশ্য
তিনি আরও বলেন যদিও এই কাজগুলোতে আবেদনময় এবং উত্তেজনাকর জিনিসও কখনো কখনো থেকে থাকে তবে বেশীরভাগ সময়েই এগুলো অতি সাধারণ অফিসে বসে কাগজে কলমে লেখালেখির কাজ হয়ে থাকে। এই কাজগুলোও যদিও গোপনীয়তার সাথেই করতে হয়, কিন্তু একজন এজেন্ট প্রায়ই বন্দুকযুদ্ধ করছে-টিভিতে যা দেখায়- আসলে তা একটা ভুল বিষয়।
“কিছু কিছু অপারেশনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আমরা অস্ত্র সাথে রাখি, কিন্তু এটা আসলে নিয়ম না,” ওয়াডলার জানান। “আমরা আইনপ্রয়োগকারী নই; এই কারণে এটা আসলে আমাদের চাকরির মধ্যে পড়ে না। হ্যাঁ, আমাদেরকেও অস্ত্র চালানো শেখানো হয়ে থাকে এবং অনেক দেশে যাওয়ার সময় আমি নিজেও অস্ত্র সাথে রেখেছি, কিন্তু সেটা ঐ পর্যন্তই। তবে নিশ্চিতভাবে একজন এফবিআই এজেন্ট হিসেবেই এগুলো সাথে রেখেছি।“
তবে কিছু সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও, যেমন সাবেক সিআইএ বিশ্লেষক, যিনি পরে ঔপন্যাসিক হয়ে যান, ডেভিড ম্যক্লোস্কি এবং ক্রিষ্টিনা হিলসবার্গ (সিআইএ-র সাবেক ডিরেক্টর অব অপারেশন) তারা একজন সরল দর্শকের মত করে এগুলো দেখতে পছন্দ করেন। কখনো কখনো গোপনে লুকিয়ে থাকা যোদ্ধারাও এসমস্ত ভাঁড়ামো এবং মজাদার বা কখনো সখনো কিছুটা বাস্তব- জিনিসগুলো দেখতে কার্পণ্য করেন না।
“দি ব্যুরো,” ম্যাক্লোস্কি জানান, একটা মানবিক বিষয়ের সাথে গোয়েন্দাদের কাজের একটা অদ্ভুত মিল করার মাধ্যমে একটা অসাধারণ জিনিস তৈরি করেছে। বিশেষকরে আমলাতন্ত্র এবং ফিল্ড লেভেল কর্মী ও হেডকোয়ার্টারের মধ্যে যে অন্তর্দ্বন্দ্ব তা ভালো করে তুলে ধরতে পেরেছে।“
দি লিটল ড্রামার গার্ল খুব সুন্দরভাবে লম্বা সময় ধরে অল্প অল্প করে ইন্টেলিজেন্স অপারেশন দেখিয়েছে। কিন্তু অন্যদিকে এটা কর্মক্ষেত্রে তৈরি হওয়া অপারেশনাল এবং নৈতিকতাঁর স্থান দেখাতে একদমই অদক্ষতা দেখিয়েছে। “
হিলসবার্গ, সিআইএ-র একজন এজেন্ট হিসেবে তাঁর কাজ হোয়াইট হাউসের জন্য রিপোর্ট প্রস্তুত করে পাঠানো, জানান, ”যেকোন স্পাই থ্রিলারে, অবিশ্বাস্যকে একটা একটা বিশ্বাসযোগ্যতা দেওয়ার প্রবণতা থাকে, বিশেষ করে আপনি যদি স্পাইগিরি করে আসেন। দিনশেষে আমরাও আনন্দ পেতে পছন্দ করি।“
রূপান্তর: সাদ্দাম হোসাইন
বার্তাজগৎ২৪/০৮ জানুয়ারী/বার্তাজগৎ ডেস্ক
বিষয় : গোয়েন্দা কাহিনি গোয়েন্দা সিনেমা দেখেন
ABOUT আমরা যোগাযোগ সার্কুলেশন নীতিমালা গোপনীয়তা নীতি মন্তব্যের নীতিমালা বিজ্ঞাপন
সম্পাদক : শতাব্দী জাহিদ
বার্তা সম্পাদক : দিদারুল ইসলাম
মোবাইল : ০১৯১১৯০৯৫০৯
ইমেইল :[email protected]
ঠিকানা: ঢাকা-১২০৭
স্বত্ব © ২০২২ বার্তাজগৎ২৪ Design & Developed By softicode