
২০১৫ সাল রাত তখন ১ বেজে ২০ মিনিট এম্বুলেন্সটা ফেরির জন্য অনেকক্ষণ যাবৎ সিরিয়ালে অপেক্ষা করছে। ঐ পার থেকে ফেরি আসবে তার পরে এম্বুলেন্স ফেরিতে উঠবে। এম্বুলেন্সের ভিতরে থাকা রাকিবের অবস্থা সংকটাপন্ন।
রাত ৯ টার দিকে রাকিব বাইক এক্সিডেন্ট করে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছে। রাকিব বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান, রাকিবের মা এই খবর শোনার পর অজ্ঞান হয়ে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি। রাকিব কে প্রথমে ফরিদপুর জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয় সেখানে অনেক চেষ্টার পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকায় রেফার করে। তাই এখন তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে ফেরিঘাটে অপেক্ষা করছে।
পাশেই আরেকটা এম্বুলেন্স সেই এম্বুলেন্সের গন্তব্যও ঢাকা। এই এম্বুলেন্সে রয়েছে গর্ভবতী রোগী। এই রোগীর অবস্থাও গুরুতর। এই রোগীকেও ফরিদপুর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকায় রেফার করেছে। রোগীর শারীরিক নানা জটিলতার কারণে ডাক্তার দ্রুত তাকে ঢাকায় নিতে যেতে বলে দিয়েছে।
রাকিবকে নিয়ে যখন টাকা মেডিকেল হাসপাতালে পৌঁছায় তখন রাত ৩.৩০ মিনিট রাকিবকে পরিক্ষা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।এবং বলে যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। কেন দেরি হয়েছে এর উত্তর কেউ দিতে পারে নি সেদিন।
এবং পাশের এম্বুলেন্সে থাকা গর্ভবতী মা কে দেখেও ডাক্তার জানিয়ে দেয় যে মা ও গর্ভের বাচ্চা দুজনেই মারা গেছে আসার পথেই। আপনারা অনেক দেরি করে ফেলেছেন। কেন এবং কি কারণে দেরি করে ফেলেছে তার উওর কেউ দিতে পারে নি।
সালটা ২০২৫ রাকিব রাত ৯ টার দিকে বাইক এক্সিডেন্ট করেছে। মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছে জানিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেয়। রাকিবের আত্মীয় স্বজন দ্রুত এম্বুলেন্স নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে রাত ১১ টার মধ্যেই তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌছায়। ডাক্তাররা দ্রুত চিকিৎসা প্রদান করে। ধীরে ধীরে রাকিব সুস্থ হতে শুরু করে। ডাক্তার বলে সঠিক সময়ের ভিতর আপনারা নিয়ে এসেছেন বলেই রাকিব এখন সুস্থ।তখন ডাক্তারকে রাকিবের বাবা বলে এখন আমাদের পদ্মা সেতু আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানুষের হৃদয়ের গভীরের মমতা উপলব্ধি করেই আমাদের পদ্মা সেতু উপহার দিয়েছন।
আর হ্যাঁ অন্য এম্বুলেন্সে থাকা গর্ভবতী মা এক চাদেঁর মত কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। মেয়ের বাবা ও মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেখ হাসিনাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
সর্বশেষ কথা হচ্ছে পদ্মা সেতু নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছে, আসলে সবকিছুকে অর্থ দিয়ে পরিমাপ করতে যাবেন না। মায়ের মমতাকে কি কখনো অর্থ দিয়ে পরিমাপ করা যায়, পদ্মা সেতু একটা মমতার নাম, আবেগের নাম, শেকরে পৌঁছানোর বাতায়নের নাম। পদ্মা সেতুর স্নেহ বুঝতে হলে চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে হবে তার মমতাকে। পদ্মা সেতু দক্ষিণ বঙ্গের মানষের জন্য ভাগ্য বিনির্মাণে অমৃতপান্থ স্বরূপ ও উন্নয়নের এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।
পদ্মা সেতু আমাদের সম্পত্তি নয় এটা আমাদের সম্পদ।
কাজী বনফুল
কলামিস্ট